আপনি কি পর্তুগাল যেতে চাচ্ছেন? কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম, পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে ও বেতন কত জানেন না। তাহলে আজকের পোস্ট থেকে বিস্তারিত জেনে নিন।
ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম উন্নয়নশীল রাষ্ট্র পর্তুগাল। যা ফুটবলের কিংবদন্তি খেলোয়ার রোনালদোর দেশ হিসেবে বেশি পরিচিত।
পর্তুগাল যাওয়ার স্বপ্ন সবাই দেখে। স্টুডেন্ট, শ্রমিক বা ভ্রমণকারী সকলেরই ইচ্ছা থাকে পর্তুগাল পাড়ি জমানো।
তবে পর্তুগাল পাড়ি জমানার আগে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আসুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই আজকের পোস্ট থেকে।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম ২০২৪
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়া অনেকটা কঠিন হলেও অসম্ভব না। প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী ও শ্রমিক থেকে পর্তুগাল যাচ্ছে।
তবে অন্যান্য দেশের চেয়ে পর্তুগাল ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন। তারপরেও চেষ্টা করলে অবশ্যই আপনি পর্তুগাল পাড়ি জমাতে পারবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশীদের জন্য পর্তুগাল ৪টি ভিসা চালু রয়েছে। স্টাডি, ওয়ার্ক পারমিট, টুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা।
বেশিরভাগ বাঙালি পর্তুগাল স্টাডি ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করে থাকলেও এ দুটি ভিসা পাওয়া একটু কঠিন।
তবে টুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসায় সহজেই পর্তুগাল যাওয়া যায়। কিন্তু পর্তুগাল টুরিস্ট ও মেডিকেল ভিসা অনেকটা ব্যয়বহুল।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল দুইটি উপায় যেটা পারবেন। প্রথমত পর্তুগাল এম্বাসির মাধ্যমে, দ্বিতীয়ত পর্তুগালে অবস্থানরত আত্মীয়ের রেফারেন্সে।
পর্তুগাল এম্বাসি হলো পর্তুগাল ভিসা সেন্টার। এই ভিসা সেন্টারে গিয়ে পর্তুগাল ভিসা জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অর্থাৎ, আপনি যখন পর্তুগাল যাওয়ার মনস্থির করবেন তখন প্রথম কাজ হল পর্তুগাল এম্বাসিতে যোগাযোগ করা।
তবে দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের দেশে পর্তুগালের কোন এম্বাসি নেই। অর্থাৎ, বাংলাদেশে পর্তুগালের কোন দূতাবাস নেই।
তবে চিন্তার কারণ নেই। আমাদের দেশে না থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বেশ কয়েকটি পর্তুগাল এম্বাসি রয়েছে।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পর্তুগাল এম্বাসি অবস্থিত। তাই আপনি যখন পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করবেন।
তখন সরাসরি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যেতে হবে। তারপর সেখানে গিয়ে পর্তুগাল ভিসার আবেদন পত্র জমা দিতে হবে।
পর্তুগাল যাওয়ার আরেকটা সহজ উপায় হচ্ছে রেফারেন্স। আপনার কোন আত্মীয় যদি পর্তুগালে অবস্থান করে বা পর্তুগালের নাগরিক হয়।
তাহলে সেই ব্যক্তির রেফারেন্সে আপনি সহজেই বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে পারেন।
এছাড়াও পর্তুগাল যাবার আরেকটি উপায় চাকরির অফার লেটার। পর্তুগালের কোন কোম্পানি যদি আপনাকে জব অফার করে তাহলে আপনার জন্য পর্তুগালে যাওয়া অনেকটা সহজ হবে।
আপনি যে উপায়েই পর্তুগাল চান না কেন। অবশ্যই আপনাকে ভারতে অবস্থিত পর্তুগাল এম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে।
বর্তমান আমাদের দেশে অনেক দালাল চক্র সাধারণ মানুষকে এই পর্তুগাল ভিসা নিয়ে প্রতারিত করছে।
তাই আপনি যদি একটু সচেতন থাকেন তাহলে এ সংক্রান্ত প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
এজন্য আপনার পর্তুগাল যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে সঠিক তথ্য জেনে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগাল দূতাবাসে যোগাযোগ করুন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে লন্ডন যাওয়ার উপায়
পর্তুগাল যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে?
পর্তুগাল ভিসার জন্য যখন আবেদন করবেন তখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এজন্য পর্তুগাল যেতে কি কি কাগজপত্র লাগে তা জানা দরকার।
- ২ বছর মেয়াদী বৈধ পাসপোর্ট
- সদ্য তোলা সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- করোনা ভ্যাকসিনের টিকা কার্ড
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- আবেদনকারীর মেডিকেল রিপোর্ট
- বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য IELTS সার্টিফিকেট
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য জব অফার লেটার ও স্টাডি ভিসার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার
- কাজের ভিসার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সনদ/স্টুডেন্ট ভিসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করবে আপনি কোন ভিসা নিয়ে পর্তুগাল যাচ্ছেন।
পর্তুগাল ভিসার ক্যাটাগরির উপর ভিসার খরচ কত টাকা তা নির্ভর করে।
বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসা নিয়ে পর্তুগাল যেতে সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লাগে। তবে অনেকের এর থেকেও বেশি টাকা খরচ হয়।
স্টাডি ভিসা নিয়ে পর্তুগাল যেতে ন্যূনতম ৫-৬ লক্ষ টাকা লাগে। আবার স্কলারশিপ পেলে ৩/৪ লাখ টাকার মধ্যেই হয়ে যায়।
আমাদের দেশ থেকে টুরিস্ট ভিসায় পর্তুগাল যেতে সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লাগে। মেডিকেল ভিসার খরচ মোটামুটি ৩-৪ লাখ টাকা।
আরো পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়া যেতে কত বছর বয়স লাগে
অনলাইনে পর্তুগাল ভিসার জন্য আবেদন করুন
বর্তমান সময়ে ঘরে বসেই পর্তুগাল জব ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। তবে অনলাইনে আবেদন করার আগে উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো আপনাকে স্ক্যান করে নিতে হবে।
- অনলাইনে পর্তুগাল জব ভিসার আবেদন করতে www.pt.indeed.com এই সাইটে প্রবেশ করুন।
- পর্তুগাল ভাষা না বুঝলে উক্ত পেজ ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করে যে জবের জন্য এপ্লাই করবেন সেটা সিলেক্ট করুন।
- তারপর আপনারা যাবতীয় তথ্য উক্ত পেজে জমা দিতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর Submit বাটনে ক্লিক করুন।
- এরপর আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে এই মেইলের মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে।
- পরিশেষে আপনি পর্তুগাল এম্বাসিতে যোগাযোগ করে পর্তুগাল জব ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।
পর্তুগাল কাজের বেতন কত?
ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে পর্তুগালে কর্মীদের বেতন একটু বেশি। পর্তুগালে একজন শ্রমিকের মাসিক বেতন বাংলাদেশি টাকায় সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
আবার যে সকল শ্রমিকের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বেশি তাদের মাসিক ইনকাম ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা।
এজন্য পর্তুগাল কাজের বেতন সম্পূর্ণ নির্ভর করে শ্রমিকের কাজের ধরন ও অভিজ্ঞতার উপর।
মনে করুন, একজন কর্মী পর্তুগাল গিয়ে ইলেকট্রিশিয়ান এর কাজ করে। তাহলে সেই কর্মীর মাসিক সাথে বেতন নূন্যতম মাসিক ১ লক্ষ টাকা হবে।
আবার একজন শ্রমিক পর্তুগাল গিয়ে ক্লিনারের কাজ করে। পর্তুগালের একজন ক্লিনারের বেতন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা।
এছাড়াও শ্রমিকের কাজের অভিজ্ঞতা ও কাজের সময়ের ওপর বেতন কম-বেশি হয়ে থাকে।
পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
পর্তুগালের প্রায় সকল ধরনের কাজের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে প্রায় সকল সেক্টরে অভিজ্ঞ শ্রমিকের সংখ্যা অনেক কম।
তাই পর্তুগাল যাওয়ার আগে যেকোনো একটি সেক্টরে ভালোভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। তাহলে পর্তুগাল গিয়ে আপনাকে আর বসে থাকতে হবে না।
- আইটি ডিপার্টমেন্ট
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ইলেকট্রিশিয়ান
- মেকানিক্যাল
- ড্রাইভিং
- হোটেল ও রেস্টুরেন্ট জব
- বিক্রয় প্রতিনিধি
- খাবার ডেলিভারি ম্যান
- কৃষিকাজ
- ফ্যাক্টরি কাজ
- ক্লিনার
এছাড়াও নির্মাণ শ্রমিক, বিভিন্ন কোম্পানির কাজ, শপিং মলে চাকরির চাহিদাও পর্তুগালে অনেক বেশি।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশে বেতন বেশি ২০২৪
বাংলাদেশে পর্তুগাল এম্বাসি কোথায়?
দুঃখের বিষয় হল, বাংলাদেশের পর্তুগালের কোন এম্বাসি নাই। তবে বেশি চিন্তিত হবেন না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই পর্তুগাল এম্বাসি রয়েছে।
ভারতের দিল্লিতে পর্তুগাল ভিসা সেন্টারে গিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শেষকথা
ভিসা চেক বিডি ওয়েবসাইটের এই পোস্টে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আজকের পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি পর্তুগাল ভিসা সম্পর্কে এটুজেট সঠিক ধারণা পাবেন।
তারপরেও যদি আপনার পর্তুগাল ভিসা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
FAQ
পর্তুগাল ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা
পর্তুগাল ১ টাকা বাংলাদেশের ১২৬.৯১ টাকা।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল কত কিলোমিটার?
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালের দূরত্ব প্রায় ৯,০৪৭ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে কত সময় লাগে?
ননস্টপ ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকেও পর্তুগাল যেতে সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টা সময় লাগে। তবে কখনো কখনো এর থেকেও বেশি সময় লাগে।
পর্তুগাল যেতে কত বয়স লাগে?
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যেতে আবেদনকারীর বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সবোর্চ্চ ৩৫ বছর হতে হবে। তবে পর্তুগাল ভিজিট ভিসার জন্য বয়সের কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
পর্তুগাল ভিসার দাম কত?
পর্তুগাল কাজের ভিসার দাম ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা, ভিজিট ভিসার দাম ৩/৪ লাখ টাকা ও স্টুডেন্ট ভিসার দাম ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
বয়স ৩৫ এর বেশি হলে ওয়ার্ক ভিসার জন্য এপ্লাই করা যাবে না?